মানকি পক্স

‎২০২২ সালের শুরু থেকে অন্তত ৭৪ টি দেশ বা অঞ্চল থেকে এখনো পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ হাজার ৮৩৬টি নিশ্চিত কেস এবং পাঁচটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে যেখানে মানকি পক্স শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মানকি পক্সকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জনস্বাস্থ্য জরুরি ঘোষণা করেছে।

মানকি পক্স:-

মানকি পক্স হলো ডিএনএ মানকি পক্স ভাইরাস দ্বারা গঠিত একটি বিরল রোগ। মানকি পক্স ভাইরাস অর্থ পক্স ভাইরাস গনের অন্তর্ভুক্ত। কোষ এবং গুটি বসন্তের মত ভাইরাস একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। MPV ভাইরাসের সংক্রমণে চিকেন পক্সের মত ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি গবেষণা ল্যাব থেকে বানরের মধ্যে প্রথম এই ভাইরাস দেখা যায়। তার থেকে মানকি পক্সের নামকরণ করা হয়। ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে মানুষের মধ্যে প্রথম এই মাঙ্কি পক্সের সংক্রমনের খবর পাওয়া যায়।

মানকি পক্সের লক্ষণ গুলি:-

মানকি পক্সের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে জ্বর, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি ভাব, পেশী ব্যথা, গলা ব্যথা, কাশি থাকে। এই লক্ষণগুলি প্রকাশ হওয়ার কিছুদিন পরে ত্বকে ফুসকুড়ি বা ত্বকে দাগ দেখা যায় যা দিন কয়েকের মধ্যে আরও পরিবর্তিত হয়। ফুসকুড়ি প্রথমে ত্বকের চ্যাপ্টা জায়গা থেকে শুরু হয় এবং তারপরে ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। এই ফুসকুড়ি গুলি আস্তে আস্তে একটি পরিষ্কার তরল দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায় এবং পরিশেষে পুজ ভরা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়। ত্বকের ফুসকুড়ি গুলি আস্তে আস্তে খসখসে হয়ে যায় এবং স্ক্রাব তৈরি করে শেষ পর্যন্ত ওগুলো পড়ে যায়। এই অবস্থায় একজন ব্যক্তি তখনই সংক্রমিত হয় যখন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে এবং ওই ফুসকুড়ি গুলির গায়ে লেগে যায়। এই ফুসকুড়ি গুলি শরীরের একটি অংশকে বা একাধিক অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর অসুস্থতা সাধারণত ১৪ থেকে ২৮ দিন স্থায়ী হয়। লক্ষণ গুলি সাধারণত হালকা হয় তবে কোন কোন ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থা তৈরি হতে পারে, তখন হাসপাতালে ভর্তির দরকার হতে চিকেন পক্স এর মত এমন একটি ফুসকুড়ি তৈরি হয় যা মুখের উপর প্রাধান্য পায়। তবে তালু ,তল এবং পৃষ্ঠীয় হাত ও পায়ে দেখা দিতে পারে। বর্তমানে ২০২২ সালে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ।ফুসকুড়ি দুই থেকে পাঁচ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। ফুসকুড়ি প্রায় দশ দিন স্থায়ী হয়।

মানকি পক্স ভাইরাস প্রতিরোধ:-

নিম্নলিখিত উপায় গুলি অনুসরণ করলে মাঙ্কি পক্স ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়। যেমন:

  • ইস্মল ফক্স ভেক্সিন নিতে হবে। এটি মানকিপক্সের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
  • সংক্রমিত প্রাণীর সাথে যোগাযোগ কমাতে হবে।
  • সংক্রমিত প্রাণীদের বিশেষ করে অসুস্থ বা মৃত প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • পশুর মাংস ভালো করে রান্না করে খেতে হবে।
  • সাবান এবং জল দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
  • ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে এমন সব লোকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে না।
  • এমন মাক্স ব্যবহার করতে হবে যা অন্যের আশেপাশে থাকাকালীন নিজের মুখ ও নাক ঢাকা থাকে।
  • যেসব জায়গা ঘনঘন স্পর্শ করা হয় সেগুলি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের যত্ন নেওয়ার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা মুলক সরঞ্জাম(PPE,) ব্যবহার করতে হবে।
  • ডেন্টাল ড্যাম এবং কনডম ব্যবহার সহ নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

মানকি পক্সের নিরাময় যোগ্যতা:-

মানকি ফক্স সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগ লোকে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ সেবন করতে হবে। বিশ্বে ২০২২ সালে প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে আফ্রিকান ক্লেভ। তবে আজ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। কিন্তু মাংকি পক্সের অন্যান্য জটিলতা হতে পারে যেমন নিউমোনিয়া এবং মস্তিষ্কে সংক্রমণ যা মারাত্মক হতে পারে।

মানকি পক্স আক্রান্ত হলে নিজের যত্ন কিভাবে নেওয়া যায়:

নিজের যদি মানকি পক্সের

উপসর্গ থাকে সেখানে ওভার দা কাউন্টার যে সমস্ত ওষুধ রয়েছে যা নিজেকে ভালো বোধ করতে সাহায্য করতে পারে যেমন ব্যাথা উপশমকারি এবং জ্বর কম করে ওষুধগুলি। উষ্ণ গরম জলে স্নান করলে ত্বকের ফুসকুড়ি সহ শুষ্ক চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিজে সংক্রমিত হলে অবশ্যই অন্যদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। অন্যদের আশেপাশে থাকলে মার্কস ব্যবহার করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পোষা প্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে। তা না হলে ওইসব প্রাণী থেকে সংক্রমণ আরো দ্রুত ছড়াতে পারে।

মানকি পক্স ও চিকেন পক্স এর পার্থক্য:-

যদিও উভয়েই ত্বকে ফুসকুড়ি তৈরি করে তবুও মাঙ্কি পক্স এবং চিকেন পক্স বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা তৈরি। অর্থ পক্স ভাইরাস হলো মানকি বক্সের এবং চিকেন পক্সের ভাইরাস হারপিস ভাইরাস। উভয় ভাইরাস ত্বকে দেখা দেয়। তবে চিকেন পক্স খুব সংক্রামক এবং তা মানকি পক্সের থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চিকেন পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় মানকি পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির লিম্প নোড ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে। ফুসকুড়িও ভিন্ন ভাবে কাজ করে। চিকেন পক্সের ফুসকুড়ি ঢেউ য়ের মতো দেখতে হয় । অন্যদিকে মানকি পক্স ঘা তৈরি করে। চিকেন পক্স দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয় কিন্তু মান কি পক্স দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

কোথায় দেখা যায়;-

এই ভাইরাসটি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দৃশ্য মন্ডলীয় রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া কঙ্গ মেশিন এবং পশ্চিম আফ্রিকান প্লেটে বিশেষ করে ভৌগোলিক এলাকার সাথে মিলে যায় এমন জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সংক্রমিত প্রাণী থেকে মানকি পক্সের ভাইরাস আসে। পরবর্তীতে মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমিত হয়ে পড়ে।

1 Comment

Leave a Reply

%d bloggers like this: