এই জ্বর সাধারণত ভাইরাসের কারণেই হয়। এই জ্বরের উপসর্গগুলি মধ্যে সর্দি, কাশি ,বমি বমি ভাব, ক্লান্তি এবং শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। ভাইরাসের কারণেই কেবল জ্বর হয় না। জ্বর একটি লক্ষণ হতে পারে যা শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে।
এই জ্বরের লক্ষণ:-
জ্বরের লক্ষণ গুলি নিচে দেওয়া হল:-
- জ্বর সাধারণত ওঠানামা করে।
- মাথা ঘোরা।
- দুর্বলতা।
- ক্লান্তি ভাব।
- মাথা ব্যথা।
- পেশী শরীর এবং জয়েন্টে ব্যথা।
- গলায় ব্যথা এবং ব্যথাযুক্ত টনসিল।
- চোখে জ্বালাপোড়া।
- নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে জল পড়া।
- কাশি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা।
- ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব।
এই জ্বরের তাপমাত্রা:-
ভাইরাল জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০৪ ডিগ্রী ফারেহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর থেকে বেশি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের উভয় ক্ষেত্রে মলদ্বার , মুখ এবং বগলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
জটিলতা সমূহ:-
সাধারণত এই জ্বর এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে কমে যায় কিন্তু যখন জটিলতা দেখা দেয় তখন ডিহাইড্রেশন,প প্রলাপ, শ্বাস যন্ত্রের , খিচুনি, কিডনি ব্যর্থতা, লিভার ব্যর্থতা হতে পারে। তাই সময় মত চিকিৎসা না করালে রোগীর জন্য মারাত্মক অবস্থা তৈরি হতে পারে।
এই জ্বর এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত জ্বরের উপসর্গ প্রায় একই রকম। তাই এই জ্বরের সেকেন্ডারি সংক্রমণ হিসাবে একটি ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে
লক্ষণগুলির তীব্রতা বোঝার জন্য কিছু পরীক্ষা করে নিতে হয় ।তাছাড়া এই জ্বরের ইতিহাস, স্বাস্থ্যের অবস্থা লক্ষণগুলির উন্নতি বা অবনতি জন্য ডাক্তার অতিরিক্ত পরীক্ষার করাতে বলতে পারেন। যেমন রক্ত পরীক্ষা, প্রসাব পরীক্ষা ,থুতু পরীক্ষা, সোয়াব পরীক্ষা, নির্দিষ্ট ভাইরাল এন্টিজেন বা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে দিতে পারেন একজন ডাক্তার। তাছাড়া সাদা রক্তের গণনা করতে বলতে পারেন। আরও আছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ,টাইফয়েড বা চিকুনগুনিয়ার জন্য কিছু পরীক্ষার দিতে পারেন। সার্বিকভাবে রোগ নির্ণয় উপসর্গের উপহার নির্ভর করে করা হয় তাই আমাদের প্রত্যেকের রাষ্ট্রের অবস্থা সম্পর্কে ডাক্তার কে সঠিক তথ্য জানানো উপ্রতিরোধ
প্রতিরোধ:-
আমরা জানি ভাইরাল সংক্রমণের জন্যই ভাইরাল জ্বর হয়। এই কারণে ভাইরাল সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা আমাদেরকে ভাইরাল জ্বর থেকে রক্ষা করবে। প্রবাদ আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম ।এটি ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে অধিক । আমাদের প্রথম এবং প্রধান প্রতিরোধের কৌশল হলো সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে। যেমন ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাত সেনিটাইস করতে হবে, মুখ এবং নাক স্পর্শ করা যাবে না, প্রতিদিন কাপড় পরিবর্তন করতে হবে, ব্যবহৃত টিস্যু ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি। সাধারণত ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে আমাদের খাবার পানিও এবং জিনিসপত্র অন্য লোকদের সাথে ভাগ করে নেয়া যাবে না এবং ভাইরাস জনিত জ্বর স্বাস্থ্যকর এবং উষ্ণ খাবার খাওয়া ভাইরাল জ্বরের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে ।কারণ ভাইরাসগুলি ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পেতে থাকে তাই ভাইরাল সংক্রমনের বিরুদ্ধে আমাদের ডায়েটে ইমিউনিটি বুস্টার এবং পুষ্টিকর সম্পূরক খাবার যোগ করা যেতে পারে। ফ্লু টিকা নেওয়া যেতে পারে ।মশা তাড়ানোর ওষুধ বা মশারি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরা আমাদেরকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। যার ফলে ডেঙ্গুর মত সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া প্রতিরোধমূলক টিপসের জন্য ভাইরাল জ্বর পরিচালনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে আমাদের সকলের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
ভাইরাল জ্বর এর প্রকারভেদ:-
এই জ্বরের প্রকারভেদ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে থাকে, যেমন
- শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল জ্বর: এই ভাইরাল জ্বরের সংক্রমণ ফ্লু এর মত উপসর্গ ।যথা , কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, জ্বর বা শরীরের ব্যথার সাথে যুক্ত ।
- কোভিড ১৯ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট ভাইরাল জ্বর।
- গ্যাস্ট্রোইন টেস্টাইনাল ব্যাঘাতের সাথে যুক্ত যেমন ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি।
- Exanthematous ভাইরাল জ্বর সংক্রমণের ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি এবং ত্বকের বিস্ফোরণের সাথে যুক্ত ।যেমন হাম, চিকেন পক্স, চিকনগুনিয়া ,রুবেলা, বসন্ত ইত্যাদি।
- হেমো রেজিক ভাইরাল ফিভার সংক্রমণের কারণে সংবহনতন্ত্রের ক্ষতি হয় ।এই ভাইরালের মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু জ্বর, এবলা, হলুদ জ্বর ইত্যাদি।
- নিউরোলজি ভাইরাল জ্বরের কারনে স্নায়ু তন্ত্রের ক্ষতি । যেমন , জলাতঙ্ক এবং ভাইরাল মেনিনজাইটিস।
পরিশেষে প্রকার, উপসর্গ ,কারণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে আমাদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
ভাইরাল জ্বরের স্থায়িত্ব:-
সাধারণ এই জ্বর তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয় কিছু উপসর্গ আরো কয়েকদিন লেগে যায় সেরে যেতে।
আবার এই জ্বর অনেক সময় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে সেরে যেতে। কিন্তু যদি দুই সপ্তাহ পরেও উপসর্গগুলি থেকে যায় তাহলে সর্বোত্তম উপায় হলো আমাদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া।
ভাইরাল জ্বর কেন হয়:-
যখন বিভিন্ন ভাইরাস আমাদের শরীর আক্রমণ করে তখন এই জ্বর হয়। কারণ শরীরের প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়ার ভাইরাস অংশগ্রহণ করে যখন ভাইরাসগুলি আমাদের শরীরকে আক্রমণ করে তখন আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে যায় এবং ভাইরাসকে মেরে ফেলার জন্য তাদের সাথে লড়াই করে। এই অবস্থায় আমাদের শরীরে পায়রোজিন নির্গত হয় যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক সীমার বাইরে বাড়িয়ে দেয় যার ফলে আমাদের জ্বর আসে।