পুষ্টি বাগানের প্রয়োজনীয়তা জানার আগে আমাদের বুঝে নেওয়া দরকার পুষ্টি এবং পুষ্টিবাগান কি? তাহলে এবার পুষ্টি ও পুষ্টি বাগান বর্ণনা করা যাক।
পুষ্টি:-
যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু খাওয়ার পরে পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদান গুলো ভেঙে গিয়ে সরল উপাদানে পরিণত হয়ে দেহে শোষিত হয় তাকে পুষ্টি বলা হয়। পুষ্টি দেহে তাপ উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং দেহকে বৃদ্ধি ও মেরামতের জন্য পুষ্ট করে তোলে।
পুষ্টিবাগান:-
বাড়ির আঙ্গিনায় সাধারণত আমাদের দেহের পুষ্টির জন্য যে সকল সবজি ও ফলমূলের চাষ করা হয় তাকে পুষ্টিবাগান বলে ।বাড়ির সকলে বাগানের কাজে যুক্ত হয়ে অবসর সময়কে কাজে লাগানো যায়। যাতে করে নিজেরাও সকলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায় এবং নিজেরা কাজ করার ফলে আনন্দ লাভ করা যায় অর্থাৎ মানসিক প্রশান্তি আসে।
প্রয়োজনীয়তা:-
অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং কম উপার্জন ও কম ক্রয় ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রতিরোধমূলক খাবারের খুবই প্রয়োজন। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের খাদ্য তালিকায় দৈনিক শাক জাতীয় সবজি ১০০ থেকে ১২৫গ্রাম , মূল ও কন্দ জাতীয় সবজি ৭৫ থেকে ৮৫ গ্রাম এবং অন্যান্য ফলমূল ৭৫ থেকে ৮৫ গ্রাম প্রয়োজন হয়ে থাকে। পুষ্টিবাগান থেকে প্রাপ্ত সবজি ও ফল খাদ্য সুষম করতে সহায়তা করে থাকে ।এই বাগান থেকে রাসায়নিক মুক্ত টাটকা সবজি যেমন পাওয়া যায় তেমনি আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও আর্থিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে এবং অপুষ্টি জনিত সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পুষ্টিবাগানের উদ্দেশ্য:-
নিজেদের চাহিদা মত সবজি ও ফল উৎপাদন করা যায়। বাড়ির ও বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ সুন্দর ও মনোরম হয়। আর্থিক সাশ্রয়তা বৃদ্ধি পায়। বাড়ির অব্যবহৃত জল কাজে লাগানো যায়।। তাছাড়া বাড়ির পচনশীল আবর্জনা, তরকারির খোসা, গরু ,হাঁস মুরগির মলমূত্র এবং বাগানের আগাছা ব্যবহার করা যায় সার হিসেবে। যাতে করে আর্থিক খরচ সাশ্রয় করা যায়। আমাদের অক্সিজেনের ঘাটতিও পূরণ হয়।
পুষ্টি বাগানের লক্ষণীয় বিষয় গুলি:খোলা মেলা এবং সব সময় রোদ থাকে এমন জমি নির্বাচন করা উচিত ।পূর্ব ও দক্ষিণ দিক বরাবর জমি হলে সবচেয়ে ভালো হয় ।প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে জমিকে ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। ছোট সবজি গুলোকে সামনে রেখে এবং বেশি উচ্চতার সবজি গুলোকে পেছনে রেখে জমি নির্বাচন করা। যে সমস্ত সবজি লতানো গাছ বিশিষ্ট সেগুলোকে বেড়ার লাগানো যেতে পারে যাতে করে ওরা পুষ্টি বাগানকে রক্ষা করা এবং অতিরিক্ত সবজি ও উৎপাদন করা যায়। সাধারণত বর্ষজীবী যেমন সজনে জমির একপাশে লাগাতে হবে যাতে সবজি গুলোকে ছায়া দান করতে না পারে। পাতি লেবু , পেয়ারা ,কলা, পেঁপে পুষ্টি বাগানে উত্তর ও পশ্চিম দিকে লাগাতে হবে এবং নিচু জায়গায় জৈব সার তৈরির গর্ত করে নিতে হবে।
পুষ্টিবাগান তৈরি :-
জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হবে এবং কিছুদিন রোদ খাওয়াতে হবে। চাহিদা মত জমি ছোট ছোট খন্ডে তৈরি করে নিতে হবে। বীজ বোনার পর গোবর সার ও মাটির মিশ্রণ দিয়ে ডেকে ঝাজড়ির সাহায্যে জল দিতে হবে।
, বেগুন, লঙ্কা, ফুলকপি ইত্যাদির জন্য আলো যুক্ত জায়গায় বীজ তলা তৈরি করে নিতে হবে।
ঋতু ভিত্তিক সবজি চাষ: বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের জন্য লাউ, শসা, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, মুখি কচু, অল, শাক, করলা, পেঁপে, বেগুন ইত্যাদি। আষাঢ় শ্রাবণ মাসের জন্য , লঙ্কা ,কাঁচকলা, শসা, শিম ইত্যাদি। ভাদ্র আশ্বিন মাসে টমেটো, ওলকপি, গাজর, লঙ্কা ইত্যাদি। কার্তিক অঘ্রান মাসে গাজর, ক্যাপসিকাম ,ধনেপাতা ,পেঁয়াজ, শাক ,রসুন, পালন ইত্যাদি। পৌষ মাঘ মাসে করলা, ঢেঁড়স, শসা ,পটল, বরবটি ,লাউ ফাল্গুন চৈত্র মাসে কলমি শাক ,বরবটি, ঢেরস, করলা ,শসা ইত্যাদি ।
রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ:যে সমস্ত গাছ রোগাক্রান্ত তা তুলে ফেলে দিতে হবে। রোগ পোকার উপদ্রবে কম ক্ষতিকারক ও জৈব ওষুধ প্রয়োগ করা সব থেকে ভালো উপায় ।ছত্রাক ঘটিত রোগের জন্য বাজার থেকে কেনা ওষুধ ব্যবহার করা যেতেপারে। এক লিটার জলের সাথে চা চামচের এক চামচ শ্যাম্পু, সামান্য ডিটারজেন্ট এবং লিকুইড ভিম মিশিয়ে সাতদিন অন্তর গাছে স্প্রে করলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া ছোট ছোট পোকা পাতা খেয়ে ক্ষতি করলে এক কেজি গুটের সাঁইয়ের সাথে একশ পঁচিশ মিলি কেরোসিন মিশিয়ে ছিটিয়ে দিলে পোকামাকড়ের হাত থেকে সবজি বাগানকে রক্ষা করা যায়।
সবজি রান্নায় সতর্কতা:গরম জলে সবজি সিদ্ধ করে জল ফেলে দিতে নেই কারণ এতে করে অনেক পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় ।তাই সবজি সিদ্ধ করার পর জল ফেলা উচিত হবে না। সবথেকে ভালো উপায় হল সবজি ভালো করে জলে ধুয়ে নিয়ে তারপরে কাটা। শাক জাতীয় সবজি অল্প তাপে রান্না করা উচিত । বেশি তাপে সবজি রান্না করলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে শাক । তাছাড়া সবথেকে ভালো উপায় হলফলমূল কিছু সময় লবণ জলের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তারপরে খেলে অনেক জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস:মাঝে মাঝে কাঁচা সবজি যেমন শসা ,গাজর, মুলা,টমেটো, লঙ্কা, পেঁয়াজ সালাত করে খাওয়া প্রয়োজন। কারণ ছালাদ হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে।
।