উচ্চ রক্তচাপ ( High blood pressure)

উচ্চ রক্তচাপ

প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ হলো শরীরের রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। রক্তচাপ না ঘটলে অংক প্রত্যঙ্গে পুষ্টি, রক্তকণিকা এবং অক্সিজেন সহজে সরবরাহ করা সম্ভব হতো না।

তবে যখন এই উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক চাপের তুলনায় উচ্চমাত্রায় বা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। ধমনী যত সরু হবে রক্তচাপ তত বেশি হবে। সাধারণ রক্তচাপকে 120mm Hg সিস্টোলিক এবং 80mm Hg ডায়াস্টোলিক বলা হয়। যদি এই রিডিং 130 -139mmHg  সিস্টোলিক এবং 80-89mmHg ডায়াস্টলিক হলে সেই স্টেজ কে উচ্চ রক্তচাপ বলে। এরপর যদি 140mmHg  সিস্টোলিক এবং 90mmHg ডায়াস্টোলিক বা উচ্চতর হয়।

যখন উচ্চরক্ত চাপ এর চিকিৎসা করা না হয় তখন উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় ধমনীর ক্ষতি হয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্ত জমাট বাধা শুরু হয়ে যায় যার ফলে হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক প্রভৃতি হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে যদিতাম মোকাবেলা করা সম্ভব হয় তাহলে মারাত্মক ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচার প্রধান তিনটি উপায় :- 

নিয়মিত ব্যায়াম:- 

নিয়মিত ব্যায়াম করা সাস্থের পক্ষে উত্তম। ব্যায়াম করার ফলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়। আর এই তাপ শরীরের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ কমাতে সহায়তা করে। বিয়ান শরীরে রক্তচাপ বাড়ায় এছাড়া ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী হতে প্রশিক্ষণ দেয়।

লবণ বা লবণযুক্ত খাবার কম খাওয়া:- 

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ বা লবণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে খাদ্যনালী শক্ত ও সরু হয়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবারে লবন এর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। প্যাকেটজাত খাবার পুরোপুরি ভাবে বাদ দেওয়া উচিত বা যেগুলোতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।

ধূমপান বন্ধ করা উচিত:- 

  • ধূমপান করা অথবা তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। কমবেশি সবাই ধূমপান করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানের ফলে বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে তার শরীরের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে। । দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানের ফলে তামাকের ভেতরের থাকা রাসায়নিক গুলো বেরিয়ে রক্তনালী ও ধমনীকে সংকুচিত বা ছোট করে ফেলে। যার ফলে রক্ত নারীদের চাপ সৃষ্টি হয় যাকে উচ্চ রক্তচাপও বলা হয়। ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন করার ফলে শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক ক্ষতি ও হয়ে থাকে। মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে, উত্তেজনাবড়িয়ে তোলে, মানসিক অশান্তি তৈরি করে। মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে তার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে রক্তচাপের সৃষ্টি হতে পারে। স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও সঠিক নয়। তবে মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য তামাক জাত দ্রব্য সেবন বাদ দিয়ে সামাজিক কাজকর্ম অথবা মানসিক প্রশান্তি দেয় এমন কাজ করা উচিত। যেমন:-
  • গান শোনা ।
  • ছবি আঁকা ।
  • গান শোনা ।
  • বই পড়া ।
  • খেলাধুলা করা ।
  • মেডিটেশন বা ধ্যান করা।
  • ব্যায়াম করা।
  • বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া।
  • সাইকেলিং করা

মানসিক বা শারীরিক যে কোন চাপে স্বাস্থ্যের পক্ষে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সব রকম চাঁদ থেকে ব্যক্তিকে দূরে থাকা উচিত। মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে তার শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে যার ফলে শারীরিক অনেক চাপ সৃষ্টি হয় তার মধ্যে অন্যতম উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো:- 

অন্যান্য রোগের যেরকম লক্ষণ প্রকাশ পায় উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে শারীরিক লক্ষণ গুলো সচরাচর প্রকাশ পায় না। আর যতক্ষণে এই লক্ষণ প্রকাশ পায় ততক্ষণে অবস্থার অবনতি খুব সহজে ঘটে যায়। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক কোনো লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না এবং যখনই লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় তখন গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, সেহেতু বেশি দেরি না করে আশেপাশে জরুরি স্বাস্থ্য দপ্তর অথবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো:-

  • নাক দিয়ে রক্ত বার হতে পারে ।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা অথবা ঝিমঝিম করে মাথা ব্যথা হতে পারে।
  • প্রচন্ড বুকে ব্যথা অথবা ধীরে ধীরে বুকে ব্যথার পরিমাণ বাড়তে পারে।
  • নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে অথবা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় বুকের ভেতর ব্যথা অনুভূত হয়।
  • প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা অথবা কখনো কখনো প্রস্রাব দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়ে থাকে।
  • হার্টবিট অতিরিক্ত বেড়ে যায় যার ফলে বুক ধরফরানি শুরু হয়।
  • মাথা ঝিমঝিম করা অথবা মাথা ঘুরে যেতে পারে।
  • শারীরিক দুর্বলতার ফলে দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যায়।
  • হাত-পা অসার হয়ে আসে।
  • কোন কোন ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হয়।
  • কথা বলার ক্ষেত্রে খুব কষ্ট অনুভূত হয়।

যদি কোন ব্যক্তির উপর একটু এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় বা নিজের উপর এই লক্ষণ গুলি দেখা যায় তাহলে বেশি দেরি না করে তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত । উচ্চ রক্তচাপের ফলে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা প্রবলভাবে দেখা দেয়। কোন লক্ষণগুলি যদি প্রকাশ পায় সেগুলিকে হালকা ভাবে না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচার উপায়:- 

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:- 

খাদ্য অভ্যাসের তালিকায় তাজা এবং টাটকা খাবার রাখা উচিত। পরিমিত ডায়েট চার্ট থাকা দরকার। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবার চাট তৈরি করা উচিত। খাবার ের সবুজ শাকসবজি ফলমূল রাখা একান্ত দরকার। খাবারের তেল চর্বি বাদ দেওয়া উচিত।

খাবারে লবন এর পরিমাণ কম রাখা:- 

নিয়মিত খাবারের তালিকায় যে খাবারগুলি খাওয়া হয় সেগুলোতে লবনের পরিমাণ কম রাখতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়া একেবারেই যাবে না। লবণ খাওয়ার ফলে রক্তনালী সরু ও শক্ত হয়ে যায়। সহজে রক্তচাপের সৃষ্টি হয়।

ওজন ঠিক রাখা:- 

প্রতিটি বয়সেই একটি নির্দিষ্ট ওজন থাকা দরকার। তাই বয়সে অনুযায়ী ওজনের একটি চার্ট ফলো করা উচিত। পরামর্শ নিয়ে বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখা খুব দরকার। বয়সের সামঞ্জস্য অনুযায়ী যদি ওজন তুলনামূলক বেশি হয় তাহলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

শারীরিক পরিশ্রম করা:- 

প্রচুর পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত। ব্যায়াম করা অথবা বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম করা ঘর মোছা, কাপড় কাঁচা ,বাসন মাজা প্রভৃতি কাজগুলো করার ফলে শারীর িক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ডেইলি ৪৫ মিনিট একটানা হাঁটলে আমাদের শরীর থেকে ক্যালরি বার্ন হয়। এবং শরীরের জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি গলে যায়। রক্তনালির মাঝে জমে থাকা চর্বি বেরিয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ ঠিকঠাক থাকে । যার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের পরিমাণ কমে যায়।

মদ পান থেকে বিরত থাকা:- 

তামাকজাত দ্রব্য শরীরের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ। ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট ,ফুসফুসের সমস্যা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক ,স্ট্রোক জাতীয় সমস্যা হতে পারে।

ধূমপান না করা:-

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ক্ষতিকর। ধূমপান করার ফলে সিগারেটের থাকা তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। রক্তনালীর ধমনীর সংকোচন ঘটাতে পারে। যার ফলে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে না হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্যান্সার দেখা দেয়।

 

Leave a Reply

%d bloggers like this: